ছাত্রজীবনে ‘ফেইল’ মানেই কি সব শেষ?

ছাত্রজীবনে ‘ফেইল’ মানেই কি সব শেষ?


শিরোনামে করা প্রশ্নটার সবচেয়ে সহজ উত্তর হচ্ছে ‘না’ এবং এই উত্তরটা দেয়া যতটা সহজ, কোনো কিছুতে ফেইল করার পর এই সহজ উত্তরটা মেনে নেয়া তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, কোথাও ব্যর্থ হওয়ার পর এরকম সান্ত্বনামূলক বাণী যদিও বা কোনো কাজে লাগে না কিন্তু আদতেই ছাত্রজীবনে একবার দুইবার ফেইলুরের সম্মুখীন হওয়া যেমন ধর, কোনো পরীক্ষায় পাশ মার্ক তুলতে না পারা, কোনো ক্লাসে প্রমোশোন না পাওয়া কিংবা পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে না পারা কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে অনেক বড় ব্যর্থতা মনে হলেও তোমার জীবনে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো প্রভাব ফেলবে না। হঠাৎ করে নিজের চোখের সামনে নিজের ব্যর্থতাকে দেখলে যেহেতু সান্ত্বনা সেই আঘাতকে প্রশমিত করতে পারে না তাই আমি সান্ত্বনা দিব না বরং ব্যর্থতাকে কাটিয়ে ওঠার জন্য তোমার যে পাঁচটি জিনিস করা উচিৎ হবে ‘না’ তা-ই বলব।

১। কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না।

আমি যদি একজন ভাষাবিদ হতাম তবে হয়ত Tension এবং Depression এই শব্দ দুটিকে পরিত্যাজ্য শব্দ হিসেবে ঘোষণা করতাম। তুমি নিজেই চিন্তা কর, ডিপ্রেসড হয়ে কি কোনো লাভ হয়? সিকি পরিমাণ লাভও কি হয়? না হয় না। বরং ডিপ্রেসড হলে কিংবা কোনো কিছু নিয়ে গভীরভাবে টেনশনে পড়ে গেলে পরবর্তীতে সফল হবার সম্ভাবনাটাও কমে যায় কারণ এই দুইটা জিনিষ আমাদেরকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। সবচেয়ে বড় কথা, কোথাও ব্যর্থ হবার পর ডিপ্রেসড হয়ে গেলে সেই ডিপ্রেসনটা আস্তে আস্তে তোমার জীবনের এ পর্যন্ত করা সবধরণের ভুল গুলোকে মনে করিয়ে দিবে আর তাতে তোমার নিজেকে এত তুচ্ছ মনে হবে যে তুমি সেই ব্যর্থতা থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। মনে রাখবে, “The present changes the past. Looking back you do not find what you left behind.” Kiran Desai । এজন্যই অযথা ডিপ্রেশনে না ভুগে বর্তমানটাকে ভাল করার চেষ্টা করলে পুরোনো ব্যর্থতা তোমার বর্তমানের তুলনায় তুচ্ছ হয়ে যাবে।
un-happy-business-man

২। সফল হবার আগ পর্যন্ত ব্যর্থতার গল্প কাউকে বলবে না।

এই যুগে আমাদের একটা বড় অভ্যাস হচ্ছে, আমাদের সাথে যা-ই হোক না কেন, তা আমরা চট করে সোশিয়াল সাইটে শেয়ার করে ফেলি। আচ্ছা, ঐ ভার্চুয়াল জগৎটার কতজন বাসিন্দা আসলেই আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী? বেশিরভাগ মানুষ না, অন্যের ব্যর্থতার গল্প শুনে ব্যথিত হবার থেকে তা উপভোগ বেশি করে। এমনকি, অনেক বেশি বিশ্বাসী কেউ ছাড়া বাকিরা দেখবে এমন অনেক পরামর্শ দেয়া শুরু করবে যা তোমার নিজে কাছেও ভাল লাগবে না।
ডিপ্রেসড হলে কিংবা কোনো কিছু নিয়ে গভীরভাবে টেনশনে পড়ে গেলে পরবর্তীতে সফল হবার সম্ভাবনাটাও কমে যায়
অনেক সময় তুমি নিজে তোমার ব্যর্থতার কথা ভুলে গেলেও মানুষ তোমাকে ভুলতে দিবে না। আর মানুষ সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া কিন্তু আর কিচ্ছু করতে পারবেনা, এমন সময় তোমার সবচেয়ে বড় হেল্পিং হ্যান্ড হবে তুমি নিজেই। সফল মানুষরা নাকি নিজেদের সফলতার গল্প অন্যের কাছে বলে না… এটাই নাকি তাদের সফল হবার মন্ত্র। সেরকম, ব্যর্থতার গল্প কাউকে না বলাও কিন্তু ব্যর্থতাকে কাটিয়ে ওঠার মন্ত্র।

৩। “আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না” এমন চিন্তা মাথায়ও আনবে না।

জানো কোনদিনটা তুমি পরিপূর্ণরূপে নিজেকে ব্যর্থ হিসেবে ঘোষনা করতে পারবে? যেদিন তুমি মনে করবে যে “আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না” সেদিন থেকে আসলেও তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না কারণ সফল হবার মত মনোবলই যদি না থাকে তাহলে সফলতা আসবে কিভাবে? তাই সবসময়ই নিজেকে অনেক মূল্যবান মনে করবে, হুম হয়ত এবার সফলতা আসে নি কিন্তু এর মানে এই না যে তুমি ইউজলেস, রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে পা পিছলাতেই পারে কিন্তু এর মানে এই না যে তোমার সামনের দিকে যাবার ক্ষমতা নেই এই ভেবে তুমি উঠে দাঁড়াবে না।
happyinfographic

৪। কখনো স্বপ্ন দেখা আর পরিশ্রম করা ছাড়বে না।

সাময়িক ব্যর্থতা আসতেই পারে, এর মানে এই না যে তুমি তোমার স্বপ্নকে শেষ করে দিবে। একভাবে স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে না পারলে অন্যভাবে করবে। হুম, অনেক সময় ব্যর্থতা এমন হয় যে এর ফলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আর সম্ভব হয়না। কিন্তু একটা রাস্তা যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন প্রকৃতি নিজেই অন্য আরেকটা রাস্তা খুলে দেয় 

৫। নিজের উপর রাগ করে তা অন্যের কিংবা নিজের উপর ঝাড়বে না।

মানুষের একটা খুবই সাধারণ স্বভাব হচ্ছে কোনো কিছুতে ব্যর্থ হলে নিজের উপর রেগে গিয়ে Self Harm করে আর তা না পারলে অনেক কাছের মানুষদের উপর রাগ ঝাড়ে। মনে রাখবে একটা ভাঙ্গা গ্লাস জোড়া দিলেও কিন্তু দাগ থেকে যায়। এই যে, ছাত্র জীবনের ব্যর্থতাগুলো, এগুলো সময়ের সাথে সাথে দেখবে আর তোমাকে তাড়া করছে না কিন্তু এরজন্য কাছের মানুষগুলোর সাথে যে দুর্ব্যবহার করলে তার জন্য অনুশোচনা কিংবা নিজের হাতে যে আঁচড়গুলো দিলে সেই দাগগুলো কিন্তু সাময়িক না। মনে রাখবে, সময় বদলাবে, জীবন বদলাবে কিন্তু কাছের মানুষগুলোই কিন্তু শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে থেকে যাবে।

ব্যর্থতা নিয়ে আমাদের মাঝে সবচেয়ে প্রচলিত উক্তিটি হচ্ছে, “Failure is the pillar of success”  ব্যর্থতা আর সফলতার মাঝে কিন্তু ধনাত্মক সম্পর্ক বিদ্যমান। অপ্রাহ উইনফ্রে, স্টিভেন স্পিলবার্গ, থমাস আলভা এডিসন, আলবার্ট আইন্সটাইন, আব্রাহাম লিঙ্কন, এলভিস প্রিসলি, বিল গেটস, আমাদের সবার প্রিয় ওয়াল্ট ডিজনি ও জে.কে রাওলিং এছাড়াও আরো অনেক সফল মানুষ কিন্তু পদে পদে ব্যর্থ হয়ে এই পর্যন্ত এসেছেন আর এদের ব্যর্থতাগুলোর সামনে কিন্তু ছাত্রজীবনের এই ব্যর্থতাগুলো কিছুই না! আচ্ছা, এমন কোনো বিখ্যাত মানুষ কি আছেন যিনি একবারও ব্যর্থ না হয়েই বিখ্যাত হয়েছেন? অবশ্যই না! তো এরা যদি পারে তবে তুমি পারবে না কেন? আর সবশেষে এই বলব যে, জীবনে সবকিছু পজিটিভলি নেয়ার চেষ্টা করবে। আজকে তুমি ব্যর্থ হয়েছো, এর মানে নিশ্চয়ই তোমার সামনে ভাল কিছু রয়েছে, হয়ত এই ব্যর্থতাই তোমার জন্য ‘শাপে বর’। আর নিজেকে কখনো আন্ডারেস্টিমেট করবে না এবং কাউকে করার সুযোগও দিবে না… কেউ যদি কখনো করেও ফেলে, তখন মনে মনে কামিনী রায়ের কবিতা আওড়াবে,
করিতে পারি না কাজ
সদা ভয় সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,-
পাছে লোকে কিছু বলে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনার ময়না ঘরে থুইয়া বাইরে তালা লাগাইছে রসিক আমার মন বান্ধিয়া পিন্জর বানাইছে

মানুষ কখনো ইচ্ছে করে বদলায় না কিছু মানুষের অবহেলা, কিছু স্মৃতি