ফাইনালে বিজয়ী দলের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি না দিতে দেওয়ায় ২৯ মার্চ আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল

ফাইনালে বিজয়ী দলের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি না দিতে দেওয়ায় ২৯ মার্চ আইসিসি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘দেশে ফিরে সব বলব’। আজ দুপুর একটার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেই ‘সব বললেন’। ঘোষণা দিলেন সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগের। জানালেন, ১৬ কোটি মানুষকে ‘ছোট’ করে এ পদে থাকতে চান না তিনি।
বিশ্বকাপ ফাইনালে আইসিসির সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামালের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও সেদিন তা দিয়েছেন তাঁর অধস্তন কর্মকর্তা আইসিসির চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন! এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সেদিন আগে-পরে কী ঘটেছিল তা সবিস্তারে বর্ণনা দেন কামাল।
শুরুতেই বললেন, ‘আইসিসির ৩.৩ ধারা অনুযায়ী, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের শিরোপা তুলে দেওয়ার দায়িত্ব সভাপতির। এ দায়িত্বের বিচ্যুতি ঘটার সুযোগ নেই। সে হিসেবে গত ২৯ তারিখে ট্রফি দেওয়ার কথা ছিল আমার। কেন দিতে পারিনি, আপনারা জানেন। সবাই জানে।’
কারণ হিসেবে কামাল তুলে ধরেন ১৯ মার্চ বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালের বিভিন্ন ঘটনা। বললেন, ‘সেদিনের ম্যাচে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল। সেদিন মেলবোর্ন ​ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) স্পাইডার ক্যামেরা ছিল না। বিশ্বকাপে এই প্রথম দেখালাম এমসিজিতে স্পাইডার ক্যামেরা নেই। এছাড়া এ ধরনের টুর্নামেন্টে বড় পর্দার মালিক আইসিসি। অথচ সেদিন বড় পর্দায় লেখা উঠল ‘‘জিতেগা ভাই জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা’’, এটার মানে কী? আইসিসি পরিচালিত স্কোরবোর্ডে এটা থাকবে কেন? ম্যাচ চলাকালীন আইসিসির কমার্শিয়াল ম্যানেজারকে বলি বিজ্ঞাপনটা নামাতে। তবু নামানো হয়নি। এরপর একের পর এক সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেদিন প্রযুক্তির ব্যবহারও ঠিকমতো হয়নি। আম্পায়াররা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে, তা বলছি না। মানুষ হিসেবে তাদের ভুল হতেই পারে। কিন্তু প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার কেন করবে না? ওই সময় বাংলাদেশ থেকে একের পর এক ফোন আসতে শুরু করে। সবার প্রশ্ন, আপনি থাকতে এসব কেন হচ্ছে? এমসিজির গ্যালারিতে দেখা গেল প্ল্যাকার্ডে লেখা আইসিসি মানে ‘‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’’’!

ম্যাচের পরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন কামাল। সে প্রসঙ্গে বললেন, ‘আমি যেমন আইসিসি সভাপতি, তেমনি একজন মানুষ, ক্রিকেটপ্রেমী। ক্রিকেটের প্রতি আমার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালোবাসা আছে। সে আবেগ থেকেই নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি। আমার কাছে আইসিসি সভাপতির চেয়ে দেশ আগে। আমি দেশের পাশে থাকতে চেয়েছি।’
ফাইনালে কেন তিনি ট্রফি দিতে পারেননি, এর ব্যাখ্যা হিসেবে বললেন, ‘ফাইনালের আগে আমাদের একটা সভা হয়েছিল। সেখানে ওই বিতর্কিত ব্যক্তিটা (নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন) ছিলেন। আমাকে বললেন, আমার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে নতুবা বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হবে। আমি বললাম, ১৬ কোটি মানুষের জন্য এমন বিবৃতি দিয়েছি। তাদের বাদ দিয়ে এটা প্রত্যাহার করতে পারব না। তিনি তখন বললেন, তাহলে আপনি ট্রফি দিতে পারবেন না। বললাম, আমি এখানে সভাপতি হিসেবে এসেছি। সভাপতি ছাড়া ট্রফি দেওয়ার এখতিয়ার কারও নেই। এটা সংবিধান পরিপন্থী। সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইলে পূর্ণ ১০ সদস্যের ৮ সদস্যের সম্মতি লাগবে। এরপর বার্ষিক সভায় সেটা ওঠাতে হবে। আর ওই সভার সভাপতিত্ব আমিই করব। সেদিনের মন্তব্যের জন্য আপনারা আমার কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারেন।’
আইপিএল স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির পর বারবার বিতর্কে জড়িয়েছে শ্রীনির নাম। মেলবোর্নে তাঁকে দেখা মাত্রই গ্যালারি থেকে সেদিন ভেসে আসে তীব্র বিদ্রূপ। সে প্রসঙ্গে কামাল বললেন, ‘দেখেন কী বিচার! সেদিন তাঁর নাম উচ্চারণ হতেই গ্যালারি থেকে ‘মানি না, মানি না’ ধিক্কার ভেসে এল। শচীন টেন্ডুলকার তাঁকে রক্ষা করে। টেন্ডুলকারের নাম উচ্চারণ হতেই সেটি থামে। যে মানুষটি নিজের দেশে বিতর্কিত, ক্রিকেটে বিতর্কিত, তিনি কিনা আইসিসির দায়িত্বে! এমন মানুষ দায়িত্বে থাকলে ক্রিকেট চলবে কী করে?’
এরপরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন কামাল, ‘এখন থেকে আমি সাবেক সভাপতি। আইসিসির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলাম। ১৬ কোটি মানুষকে ছোট করে সভাপতির পদে থাকতে চাই না। যারা অসাংবিধানিক ও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না, তাদের সঙ্গে আমি কাজ করতে পারি না। ’
শোনা যাচ্ছিল, কামাল মামলা করতে পারেন। সে প্রসঙ্গে বললেন, ‘মামলা করার পক্ষে নই আমি। কার বিরুদ্ধে মামলা করব? ওই বিতর্কিত ব্যক্তির (শ্রীনি) বিরুদ্ধে? সে তখন বলবে, আইসিসি বলেছেই বলে ট্রফি দিয়েছি। তখন মামলা করতে হবে আইসিসির বিরুদ্ধে। আমি আইসিসির বিরুদ্ধে মামলা করার পক্ষপাতী নয়।’

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী

সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি তাইতো আমি বসে একা

Why I Hate My Life? Steps reasonable.| Properly I hate my life Disgusting