রুবেলের সেই বাঁধনহারা উদ্যাপন। ছবি: শামসুল হকএকটা সময় ছিল রুবেল বললেই মানুষ চিনত চিত্রনায়ক রুবেলকে। কিন্তু এখন? রুবেল বলতেই বোলার রুবেল; প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানের উইকেট ছত্রখানের পর যিনি দুই হাত প্রসারিত করে ইগলের মতো ছোটেন! বিশ্বকাপে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, পেয়েছেন সাফল্য। ৯ মার্চ অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ ম্যাচসেরা হলেও রুবেলের অবদান কিছুতেই ভোলার নয়। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে রুবেল নিয়েছেন ৮ উইকেট। এর মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ৪টি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্যযাত্রার অন্যতম নায়ক তিনি। ক্যারিয়ারে নানা উত্থান-পতন থাকলেও জীবনের বড় একটা ঝড় গেল কমাস আগে। কিন্তু ঝড়ের পরই তো আকাশের মেঘ কাটে, সন্ধান মেলে সুন্দর একটা দিনের। পেছনের খারাপ সময় কাটিয়ে রুবেল পেয়েছেন সুন্দর দিনের। হয়ে উঠেছেন সময়ের নায়ক। এই নায়ক-জীবন কেমন লাগছে? বললেন, ‘আমি কখনো সিনেমার নায়ক হতে পারব না।’ রুপালি পর্দায় না হতে পারেন, মাঠে তো নায়ক হওয়া যায়! হেসে উঠলেন রুবেল, ‘আসলে এখন সবকিছুই ভালো লাগছে। সবাই ভীষণ গুরুত্ব দিচ্ছে। ছবি- অটোগ্রাফ...সব মিলিয়ে দারুণ!’ এটাই তো নায়কদের জীবন, তাই না? আবারও হাসলেন, ‘এসব যদি নায়কের জীবন হয়, তবে আমি নায়কই!’ বিশ্বকাপের আগে কঠিন ঝড় গেছে। ব্যক্তিগত সেই সমস্যা কাটিয়ে রুবেল এখন ভীষণ আত্মবিশ্বাসী, ‘এখন এসব ব্যাপারে আমি একদমই চিন্তিত নই। আগেও চিন্তিত ছিলাম না। লক্ষ্য ছিল, বিশ্বকাপে ভালো খেলতে হবে। আর যে কোনো একটা ম্যাচ জেতাতে হবে। দুটো লক্ষ্যই পূরণ হয়েছে।’ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য নতুন নয়। খেলেছেন ২০১১ বিশ্বকাপ। তবে গতবার বলার মতো তেমন কিছু করতে পারেননি। কিন্তু এবার? নতুন করে কিছু বলার নেই। দুই বিশ্বকাপের পার্থক্য কী বুঝলেন? উত্তরে মিলল তাঁর রসবোধের পরিচয়, ‘পার্থক্যটা হচ্ছে গতবার বিশ্বকাপ খেলেছি বাংলাদেশে আর এবার অস্ট্রেলিয়ায় (হাসি)।’ এরপর সিরিয়াস ভঙ্গিতেই জানালেন, ‘আসলে নিজের কথা বললে, গত বিশ্বকাপে বলার মতো ভালো খেলিনি। এবার ভালো খেলেছি। বিশেষ করে এমন একটা ম্যাচে ভালো খেলেছি, যেটাতে জিতে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আনন্দের উপলক্ষ তৈরি করতে পেরেছি।’ মাঠে পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে জীবনটা যেন উজাড় করে দিচ্ছেন। বললেন, ‘বিশ্বকাপটা আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে চেয়েছি। বিশ্বকাপ বলে নয়, যখনই মাঠে নামি চেষ্টা করি, চাই শতভাগ উজাড় করে দিতে। বিশ্বকাপের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিছু একটা করতে চাই, যাতে সারা জীবন আমাকে সবাই মনে রাখে। সামনে যখন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব, শতভাগই দেব।’ মেলবোর্নের সংবর্ধনায় ভক্তদের সঙ্গে সেলফি। ছবি: প্রথম আলোকোয়ার্টার ফাইনালে বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে দারুণ এক উদ্যাপন করেছিলেন। অমন উদ্যাপনের পেছনে কোনো ঘটনা কাজ করেছে? রুবেল জানালেন, ‘কোহলির সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সময় টুকটাক লেগেছিল। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেগুলো মাথায় রাখা যায় না। মাঠে কোহলি চাইবে আমার বলে রান নিতে, আর আমি চাইব ওকে আউট করতে। সে একটু আক্রমণাত্মক। আমিও আক্রমণাত্মক খেলতে পছন্দ করি। এই আরকি!’ সামনে পাকিস্তান সিরিজ। তার আগে বিসিএল টুর্নামেন্ট। রুবেলের মনোযোগ আপাতত এ দুটোতেই, ‘পাকিস্তান আসছে। তার আগে বিসিবির একটা ওয়ানডে টুর্নামেন্ট আছে। সেটা খেলতে হবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে বর্তমান আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে দারুণ খেলতে চাই। আমাদের কন্ডিশনে ওরা খুব ভালো দল। আশা করি, পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াইটা হবে দারুণ।’ বিশ্বকাপে বহু মুহূর্ত জমা হয়েছে মনে। রুবেলের প্রিয় মুহূর্তটা কিছুটা ব্যতিক্রম, ‘বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরার আগে মেলবোর্নে একটা বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল আমাদের। সেখানে বিসিবি সভাপতিও উপস্থিত ছিলেন। বিসিবি সভাপতি সব খেলোয়াড়কে পরিচয় করে দিচ্ছিলেন। আমার নামটা মজা করেই একটু পরে বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উপস্থিত দর্শকেরা তো চিৎকার শুরু করল, ‘‘রুবেল, রুবেল’’ বলে! অসাধারণ মুহূর্ত ছিল সেটা।’ ২২ মার্চ বাংলাদেশ দল যেদিন ফিরল, বিমানবন্দরে বহু তরুণীর হাতে ছিল ‘ম্যারি মি রুবেল’ প্ল্যাকার্ড। শুনে হাসলেন রুবেল, ‘ফেসবুকে দেখেছি। এগুলো নিয়ে আমার কী বলার আছে! তারা বলছে, আমি দেখছি!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সোনার ময়না ঘরে থুইয়া বাইরে তালা লাগাইছে রসিক আমার মন বান্ধিয়া পিন্জর বানাইছে

মানুষ কখনো ইচ্ছে করে বদলায় না কিছু মানুষের অবহেলা, কিছু স্মৃতি